
একটু আগে আকাশ যেটুকু পরিষ্কার ছিলো এখন আর সেটাও নেই। কুয়াশা উঠে আসছে নিচের খাদ বেয়ে। সমতল একটা পাহাড়ের কোলে এই গ্রাম। বস্তুত হাওয়া যেদিক দিয়ে তেজী হয়ে আসে সেদিকটাই পাহাড় আটকে রেখেছে। টংলুর দিকটা। টংলু থেকে আসা রাস্তাটাও এসে মিলেছে এখানে। এতোকিছু এখন ভাবার সময় নেই। শরীরটাকে এখন একটু বিছানায় এলিয়ে না দিলেই নয়। ইগোয়েনের পরিচিত হোটেলে উঠলাম গিয়ে। আমাদের ছয়জনের জন্য তিনটি খাটের একটা রুম। প্রতি খাটে দুইজন করে। এখানকার বাসাগুলোর সবচেয়ে ভালোলাগে যে জিনিসটা তা তলো বেশ সাজানো-গোছানো। কোন চাকচিক্য নেই। নেই

কোন কৃত্রিমতা। কাঠ দিয়েই বানানো সাধারন রুমগুলোও যে এতটা সুন্দর করে সাজানো যেতে পারে না দেখলে বিশ্বাসই করতে ইচ্ছে হয় না। তার উপরে প্রায় প্রতিটি রুমেই আছে নানা রাকুকাজ করা মাটির তৈজসপত্র, দেয়ালে ঝুলছে সস্তা কিন্তু চকচকে ছবির ফ্রেম। জানালার কাঁচের সাথে ঝুলছে রং বেরং এর বুনো ফুলের টব। এতোটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম যে ফ্রেশ হবার প্রয়োজনটুকু বোধ করিনি। রুমে ঢুকেই সটান হয়ে বিছানায় পড়ে গেলাম। মিনিট না ফুরোতেই তলিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে।

আমার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই ইংরেজ ট্রেকারও দেখি বেশ মজা করে ফুটবল খেলা দেখছে। কোথাও গেলে নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হওয়াটা আমার শখ বলা যায়। কথায় কথায় বেশ গল্প জুড়ে দিলাম তার সাথেও। বয়স ত্রিশের কোঠায়। ছিপছিপে লম্বা শরীর। পেশায় সফটওয়্যার ডেভলপার। সামার ভ্যাকেশনে ইন্ডিয়া বেড়াতে এসেছেন। গত প্রায় একমাস ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন দিল্লী, আগ্রা, কাশ্মীর, লাদাখ, দার্জিলিং। এটাই শেষ। সান্দাকফু থেকে ফিরে দেশে চলে যাবেন। বেশ খাতির হয়ে গেলো তার সাথে।


এভাবে কতক্ষন ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম মনে নেই। একসময় এসে ইয়োগেন রাতের খাবার খেতে ডেকে নিয়ে গেলো। একদম সাধাসিঁধে খাবার। ভাত, ডাল, ডিম আর সবজি। সাথে পাপড় ভাজা। হাই অল্টিচুডে নিজেদের সুরক্ষার জন্য সবই নন-ভেজ। খেতে খেতেই পরদিনের প্লান সাজাচ্ছিলাম। সকাল আটটার মধ্যে বেড়িয়ে পড়লে বিকেলের বেশ আগেই কালাপোখারি পৌছে যাবো। সেখান থেকে সান্দাকফু আর মাত্র নয় কিলোমিটার। কালাপোখারি পর্যন্তই হবে আগামী দিনের গন্তব্য। আর সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলে, তীব্র বাতাস অবাধ্য মেঘেদের সরিয়ে দিলে টুমলিং থেকেই সকাল দেখা যাবে রূপবতী কাঞ্চনুজঙ্ঘাকে। কিন্তু ইতিমধ্যে যেভাবে মেঘ জমতে শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে আগামীকাল সে আশায় নিরাশার বালি পড়বে।